কুমিল্লার চান্দিনা থেকে বরযাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বর অমিত কুমার সরকার। চারদিকে উৎসবের আমেজ, বাদ্যযন্ত্র আর সানাইয়ের সুরে ভাসছিল গোটা গ্রাম। বরযাত্রীর গাড়িবহরও সাজানো ছিল যথেষ্ট জাঁকজমকভাবে। কিন্তু সেই আনন্দের যাত্রা শেষ হলো এক অপূরণীয় বেদনায়, বিয়েবাড়ির বদলে গন্তব্য হলো হাসপাতাল, আর সেখান থেকেই ফিরে আসলেন নিথর হয়ে।
বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই রাত ২টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩২ বছর বয়সী অমিত কুমার সরকার। তিনি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের প্রবাসী দিলীপ সরকারের ছেলে। তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাব গ্রামে।
স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা অমিত কিছুদিন আগে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেশে আসেন। বুধবার ছিল গাঁয়ে হলুদের আয়োজন, পরিবার-পরিজনের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে কেটেছিল দিনটি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বর সাজিয়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরে মুকুট মাথায় দিয়ে, চন্দনের ফোঁটা নিয়ে মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।
রাত ৯টার দিকে বরযাত্রী রওনা হয় নারায়ণগঞ্জের দিকে। গাড়িবহর যখন কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় পৌঁছায়, তখনই হঠাৎ অমিত বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। স্বজনরা দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। ঢাকায় নেওয়ার পর রাত ২টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মৃত্যুর খবরে মুহূর্তেই আনন্দমুখর পরিবেশ নেমে আসে শোকে। অমিতের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষ কেউই এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না। কয়েক বছর আগে অমিতের ছোট ভাই আশিক সরকার ঘুমের মধ্যে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। সেই শোক ভুলে মা-বাবা একমাত্র সন্তান অমিতকে ঘিরেই নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এবার সেই আশার আলোটুকুও নিভে গেল।
অমিতের প্রতিবেশী গুরুপদ সরকার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমিও বরযাত্রীর গাড়িবহরে ছিলাম। আমরা সামনের দিকে চলে গিয়েছিলাম, হঠাৎ বরের গাড়ি থেকে ফোন আসে, গাড়ি ঘুরিয়ে গৌরীপুরে আসেন, বর অসুস্থ। এরপর ঢাকায় ল্যাবএইডে নেওয়া হয়। আর ওর বিয়ের বাড়িতে যাওয়া হলো না, ডাক্তার জানিয়ে দিল অমিত আর নেই।
অমিতের অকাল মৃত্যুতে গোটা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একদিকে গাঁয়ে হলুদের রঙ, অন্যদিকে সাদা কাফনের কাপড়, সত্যিই যেন জীবন মৃত্যুর নির্মম সংলগ্নতা।