Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা কূটনৈতিক বার্তা দিল ভারত

News Image

রাশিয়া থেকে ভারতীয় তেল আমদানি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিহাসের একটি পুরনো অধ্যায় তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড তাদের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ১৯৭১ সালের একটি পত্রিকার প্রতিবেদন শেয়ার করে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছিল। ওই দিনটির উল্লেখ করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “এই দিনে, সেই বছর—যুদ্ধের প্রস্তুতি, ৫ আগস্ট ১৯৭১”।

পত্রিকার হেডলাইনে লেখা ছিল: “১৯৫৪ সাল থেকে পাকিস্তানে ২ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ”। প্রতিবেদনে তৎকালীন প্রতিরক্ষা উৎপাদন মন্ত্রী ভি সি শুক্লার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়, যেখানে তিনি বলেন, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে অস্ত্র বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও যুক্তরাষ্ট্র তা অব্যাহত রেখেছিল। তিনি অভিযোগ করেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলো পাকিস্তানের আগ্রাসনের ব্যাপারে চোখ বন্ধ রেখেছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন “বিনিময় মূল্যে” পাকিস্তানকে অস্ত্র বিক্রি করেছিল এবং পাকিস্তান ১৯৭১ সালের যুদ্ধ লড়েছিল মূলত মার্কিন ও চীনা অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে।

ট্রাম্পের হুমকি ও ভারতের জবাব
এই পোস্টটি আসে ঠিক একদিন পর, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দেন যে ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখে, তবে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে অনেক বেশি বাড়ানো হবে। এর পাল্টা জবাবে ভারত কড়া ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা তুলে ধরে।

ভারত দাবি করে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম আকাশচুম্বী ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রই রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিকে “উৎসাহিত” করেছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনার জবাবেও জানায়, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা “বাজারের বাস্তবতার কারণে বাধ্যতামূলক”, অথচ যারা ভারতের সমালোচনা করছে তারা নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে—যেটা তাদের জন্য “জরুরি প্রয়োজনে নয়, বরং সুবিধার কারণে”।

পাকিস্তানকে ছাড়, ভারতের ওপর চাপ
ট্রাম্প যখন ভারতের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন, তখন পাকিস্তানকে দিচ্ছেন শুল্কে ছাড়। সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে পাকিস্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে ভারতের মতো বহু দেশের ওপর শুল্ক আরও বাড়ানো হয়েছে।

এই ছাড় আসে ইসলামাবাদ ও ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার পটভূমিতে। ১৮ জুন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার ঠিক পরেই।

এরপর জুলাই মাসে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারতকে “মৃত অর্থনীতি” বলে উল্লেখ করেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে একগুচ্ছ বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেন। এমনকি তিনি এমন মন্তব্যও করেন যে, ভবিষ্যতে ভারত পাকিস্তান থেকে তেল কিনতে পারে। এই মন্তব্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কে আরও ঠাণ্ডাভাব স্পষ্ট হয়।

Watermark