Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:১১ অপরাহ্ণ

সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের ভাবনা চলছে

News Image

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘোষণা করেছেন যে তাঁর দেশ আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে। তিনি জানান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নিউইয়র্ক অধিবেশনে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়া হবে। আলবানিজের ভাষায়, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙার এবং গাজায় সংঘাত, দুঃখ ও দুর্ভোগের অবসান ঘটানোর মানবতার সর্বোত্তম আশা।

এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে, যখন কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যও আগামী মাসের ওই সভায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে কয়েক লক্ষ মানুষ ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে মিছিল করেছে।

প্রতিবাদের পরদিন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সতর্ক করে বলেন, এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বলেন, স্বীকৃতির প্রশ্নটি সময়ের ব্যাপার, সম্ভাবনা নয়।

তবে বিরোধী লিবারেল পার্টি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় ঐকমত্যের বিপরীত, যেখানে বলা হয়েছিল হামাসের নিয়ন্ত্রণ থাকা অবস্থায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। লিবারেল নেতা সুশান লে বলেন, জিম্মিদের ফেরত আনা ও হামাসকে পরাজিত করার আগেই এই স্বীকৃতি দেওয়া হামাসের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিনস পার্টি এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানালেও সমালোচনা করেছে যে সরকার জনমতের দাবির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না। তারা বলছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানাচ্ছে, অথচ সরকার তা উপেক্ষা করছে। অস্ট্রেলিয়ান প্যালেস্টাইন অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কও এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক আড়াল বলে উল্লেখ করেছে, যা ইসরায়েলের গণহত্যা ও বর্ণবাদী নীতি চলতে দিচ্ছে এবং অস্ট্রেলিয়ার ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্ততাকে ঢেকে রাখছে।

আলবানিজ জানান, এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত কিছু অঙ্গীকারের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ অস্তিত্ব স্বীকার, নিরস্ত্রীকরণ এবং সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া হামাসকে বিচ্ছিন্ন, নিরস্ত্র ও গাজা থেকে অপসারণে সহায়তা করবে।

এদিকে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স জানিয়েছেন, তাদের মন্ত্রিসভা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিন স্বীকৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, কিছু মিত্র দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, কিছু দেয়নি, কিন্তু নিউজিল্যান্ড তার নিজস্ব নীতি ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি সরল নয়, তাই বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে শান্ত ও সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘ বিভাজন পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের জন্য ৪৫ শতাংশ ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল, যা বাস্তবায়িত হয়নি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের এই ঘোষণাগুলো এসেছে এমন এক দিনে, যখন ইসরায়েলি হামলায় গাজা শহরে আল জাজিরার পাঁচজন কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলের যুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত ৬১ হাজার ৪৩০ জন। এছাড়া অবরোধের কারণে খাদ্য সংকটে প্রায় ২০০ মানুষ, এর মধ্যে ৯৬ শিশু, অনাহারে মারা গেছে।

Watermark