Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ণ

অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না ছেলেরা, ভাঙা ঘরে দিনরাত কাটে বৃদ্ধার

News Image

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহুনিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধা জুলেখা বেগম। বয়স ও অসুস্থতার ভারে ন্যুব্জ এই নারী বছরের পর বছর ভাঙা ঘরের মাটিতে পলিথিন জড়িয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এক সময় দুই ছেলেকে মানুষ করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি, অথচ এখন সেই দুই সন্তানের কাছেই হয়ে উঠেছেন বোঝা।

প্রতিবেশীরা জানান, জুলেখার জীবনে কষ্টের শুরু স্বামী মারা যাওয়ার পর। প্রায় ২০-২৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে কখনো ধান শুকানোর চাতালে, কখনো অন্যের বাড়িতে দিন-রাত খেটে দুই ছেলেকে বড় করেছেন তিনি। বড় ছেলে জুলহক বর্তমানে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন, ছোট ছেলে জুলহাস কৃষিকাজে যুক্ত। কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে ছোট ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়, ফেলে রেখে যায় মাকে একা। প্রথম দিকে বড় ছেলে কিছু খাবার পাঠালেও সেটিও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এখন অনেক দিনই একবেলা খাবারও জোটে না তার কপালে।

অভিযোগ রয়েছে, জুলেখার বয়স্ক ভাতার টাকাও নিয়ে নেয় ছোট ছেলে জুলহাস। সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইলে তিনি গালাগালি করেন এবং সংবাদকর্মীরা খবর নিতে গেলে বাধা দেন। স্থানীয়দের দাবি, নিজের মায়ের চিকিৎসা তো দূরের কথা, খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রেও উদাসীন জুলহাস। তার ভাষ্যমতে, মায়ের সেবা করলে মল-মূত্র পরিষ্কার করতে হবে, যা তিনি করতে চান না।

গ্রামের ইসরাফিল বলেন, কয়েক মাস ধরে জুলেখার শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছে। খাবার ও চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ছোট ছেলে তাকে দেখতে পর্যন্ত আসে না, বরং শ্বশুরবাড়িতেই থাকে। মাঝে মাঝে শাশুড়ি সামান্য কিছু খাবার দিয়ে যান।

স্থানীয় মাকসুদুল আলম লিটন জানান, এলাকার মানুষ সাহায্য করতে চাইলে জুলহাস তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। ফলে কেউ এগোতে পারে না। তার চোখে, এই বয়সে একজন নারীকে এমন অযত্নে-অবহেলায় দেখতে পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের।

এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, নিজের মা ভাঙা ঘরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, আর ছেলে পাকা ঘরে নিশ্চিন্তে থাকছে এ দৃশ্য বেদনাদায়ক। খাবার দিতে গেলে বলা হয়, মা কি আপনাদের না আমার? আমি যেমন ইচ্ছা তেমন রাখব। এই আচরণের কারণে অনেকেই সাহায্য করতে সাহস পান না।

শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহামেদ বলেন, ঘটনাটি তার জানা নেই। সঠিক তথ্য পেলে ইউনিয়নের মেম্বারের মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সবশেষে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জুলেখা বেগমের একটাই চাওয়া, প্রতিদিন মুখে দু’মুঠো খাবার আর সামান্য স্নেহ-যত্ন, যা হয়তো এই সমাজের করুণার অপেক্ষায় থমকে আছে।

Watermark