Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:১১ অপরাহ্ণ

নোয়াখালী সফরে মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরি: সত্য না শুধুই গালগল্প?

News Image

নোয়াখালীতে মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরির কথা জনশ্রুতি হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে শোনা যায়। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নোয়াখালী সফরে আসা গান্ধীকে কেউ বা কারা ছাগলটি চুরি করে মাংস রেঁধে পাঠিয়েছিল—এমন গল্প নানা মিডিয়ায় ও স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, এ ঘটনা কোনো প্রামাণ্য সূত্রে নিশ্চিত নয়।

প্রথম আলোতে লিখেছেন আহমেদ মুনির ও মাহবুবুর রহমান। তারা সোনাইমুড়ীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের নথি, মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিয়েন্স উইথ ট্রুথ, এবং ঐ সময়কার সংবাদপত্রের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গান্ধীর ছাগল চুরি হওয়ার কোনো তথ্য প্রামাণ্য নথিতে বা তাঁর আত্মজীবনীতে পাওয়া যায়নি।

গান্ধী নিজে দুধ পান করতে গরু বা মহিষের দুধ এড়িয়ে চলতেন। ১৯১৯ সালে অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে ছাগলের দুধ পান করার সিদ্ধান্ত নেন, যা তাঁর নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলে বিবেচিত। ১৯৩১ সালে লন্ডন সফরের সময় ‘নির্মলা’ নামের একটি ছাগলও সঙ্গে ছিল।

১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৪৭ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত চার মাস গান্ধী নোয়াখালীতে অবস্থান করেন। তিনি ৪৭টি গ্রামে গিয়ে ৪৭টি শান্তি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করে আস্থা পুনরুদ্ধার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অর্থনীতি সংক্রান্ত পরামর্শ দেন। শান্তি সভা ও প্রার্থনাসভায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করত।

গান্ধীর সফরের বিভিন্ন ঘটনার লিখিত সূত্রে দেখা যায়, জয়াগ গ্রামে গান্ধীকে মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের ঘরে সাদরে আতিথ্য দেওয়া হয়েছিল। সুকুমার রায়ের নোয়াখালীতে মহাত্মা গ্রন্থে এ বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে ছাগল চুরি সংক্রান্ত কোনো উল্লেখ নেই, বরং গান্ধীর আতিথ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।

নোয়াখালী সফর

গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব রাহা নবকুমারও প্রথম আলোককে জানান, গান্ধীর ছাগল চুরি হওয়ার কোনো প্রামাণ্য তথ্য নেই। মহাত্মা গান্ধীর সফরসঙ্গীদের দিনপঞ্জিতে এমন কোনো ঘটনা লেখা ছিল না। তাই ছাগল চুরির গল্পটি মূলত লোকমুখে প্রচলিত গালগল্প বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, গান্ধীর নোয়াখালী সফর ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কমানোর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। তাঁর কর্মসূচি ও গ্রাম পরিদর্শনের প্রতিদিনকার দিনপঞ্জি সেই ঐতিহাসিক সত্যকে প্রমাণ করে।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, আহমেদ মুনির ও মাহবুবুর রহমান

Watermark