Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ণ

‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ ভালো স্বামী বানাতে বিশেষ স্কুল চালু

News Image

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালে পুরুষদের ‘ভালো স্বামী’ বানাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে চালু হয়েছে ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ যেখানে পুরুষদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে তারা স্ত্রী ও পরিবারের পাশে আরও দায়িত্বশীলভাবে দাঁড়াতে পারেন। শুধু গৃহস্থালি কাজই নয়, নারীর স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক নানা বিষয়ে সচেতন করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।

সম্প্রতি এপি একদিনের জন্য এই বিশেষ স্কুল ঘুরে দেখেছে। সেদিন ক্লাস নিচ্ছিলেন স্থানীয় ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান। তিনি পুরুষদের বোঝাচ্ছিলেন গৃহস্থালি কাজে নারীদের পাশে দাঁড়ানো শুধু দায়িত্ব নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিতেও তা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ভাষায়, “এমনকি নবীজীও (সা.) বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী-সন্তানকে কাজে সাহায্য করে না সে ভালো মুসলিম নয়।”

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পরিবর্তনের উদ্যোগ

সেনেগালে এখনও পরিবার ও সমাজের বড় সিদ্ধান্তগুলো নেন পুরুষরা। নারীদের মতামত প্রায় উপেক্ষিত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে চালু করেছে এই প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য ‘ইতিবাচক পুরুষত্ব’ (Positive Masculinity) জাগ্রত করা। ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে পুরুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেন। জুমার খুৎবায়ও তিনি নারী অধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, এইচআইভি সচেতনতা থেকে শুরু করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মতো বিষয় তুলে ধরেন।

তাঁর খুৎবা ও স্কুলের ক্লাসের ফলে অনেক পরিবারে পরিবর্তন এসেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ৬০ বছর বয়সী হাবিব ডিয়ালো বলেন, “আগে বুঝতাম না সন্তান জন্মদান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। এখন আমার ছেলের স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা হলে আমি হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য জোর দিই।”

নারীদের অভিজ্ঞতায় বাস্তব পরিবর্তন

কিছু নারীও জানিয়েছেন, এই প্রকল্প তাদের সংসারে পরিবর্তন এনেছে। ৫২ বছর বয়সী খারি নডেয়ে বলেন, “আমার স্বামী আগে কোনো কাজেই হাত লাগাতেন না। এখন তিনি রান্নাতেও সাহায্য করেন।”

স্বাস্থ্য সূচকে উন্নতি

জাতিসংঘ জানাচ্ছে, সেনেগাল, নাইজার, টোগো, বুরকিনা ফাসোসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে এই কর্মসূচি চালু রয়েছে। এসব দেশে মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতকের সুরক্ষায় ইতিবাচক ফল মিলছে। ২০২৩ সালে সেনেগালে প্রতি লাখে ২৩৭ জন মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন। নবজাতকের মৃত্যুহারও উদ্বেগজনক—প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ২১ জন জন্মের এক মাসের মধ্যেই মারা যায়।

জাতিসংঘের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার নামিয়ে আনতে হবে প্রতি লাখে ৭০ জনের নিচে এবং নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১২ জনের নিচে।

নির্বাচিত পুরুষদের প্রশিক্ষণ

এই স্কুলে এলোমেলোভাবে কাউকে ভর্তি করা হয় না। স্থানীয় সমাজে যাদের প্রভাব আছে, নেতৃত্বগুণ ও নারী অধিকার বিষয়ে সচেতনতা আছে—এমন পুরুষদেরই বেছে নেয় জাতিসংঘ। এখন পর্যন্ত সেনেগালজুড়ে প্রায় ২০টি স্কুলে ৩০০ জন পুরুষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তারা নিজেদের এলাকায় শেখা বিষয়গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

জাতিসংঘ মনে করছে, এমন উদ্যোগ শুধু স্বাস্থ্য নয়, বরং নারী অধিকার, সমতা ও নিরাপদ যৌনতা বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলছে। আর ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চেহারা।

Watermark