দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর সোমবার (১৮ আগস্ট) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী, তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
এর আগে রোববার (১৭ আগস্ট) বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মীর এ কে এম নুরন্নবী। এসব প্রতিবেদনে সাপের কামড়ে মৃত্যুর উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাসে সারা দেশে সাপের কামড়ে ৩৮ জন মারা গেছেন। একই সময়ে দংশিত হয়েছেন ৬১০ জন।
রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তিনি জানান, শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাপের দংশনে ভর্তি হয়েছেন ৪১৬ জন। এর মধ্যে ৯১টি ছিল বিষধর সাপের কামড়, যার মধ্যে ১৮ জনকে কামড়ায় চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন, যাদের পাঁচজনের মৃত্যু হয় চন্দ্রবোড়ার কামড়ে।
ডা. রোবেদ আমিন আরও জানান, বাংলাদেশে সাপের দংশন একটি স্বীকৃত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২২ সালের জাতীয় জরিপ বলছে, দেশে প্রতি বছর চার লাখের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রধান বিষধর সাপগুলোর মধ্যে গোখরা, কালাচ (ক্রেইট), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ সাপ উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, ‘‘বিষধর সাপের একমাত্র স্বীকৃত চিকিৎসা হলো অ্যান্টিভেনম।’’ বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন হয় না। ভারত থেকে আমদানি করা অ্যান্টিভেনম সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। তবে অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ ও প্রয়োগে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। তারপরও যেখানে এটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে সুফল মিলেছে বলে জানান তিনি।
হাইকোর্টের নির্দেশে এবার সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো।