সুখেই সংসার শুরু করেছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রজব আলীর ছেলে মো. মুজিবুর রহমান ও একই উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের মহিবুর রহমানের মেয়ে ওয়াহিদা আক্তার রিমা (২২)। বছর তিনেক আগে তাদের ঘর বাঁধা হয়। সংসারে আলো জ্বেলে আসে যমজ কন্যাশিশু। শুরুতে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও পরকীয়ার ছোঁয়ায় অচল হয়ে পড়ে সংসার।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর কিছুদিন সংসার ভালো চললেও পরে মুজিবুর জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। সেই থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়। এ নিয়ে রিমাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন মুজিবুর। পরবর্তীতে যৌতুকের দাবিতে রিমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গত রবিবার (১৭ আগস্ট) সকালে স্বামীর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় রিমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
রিমার বাবা মহিবুর রহমান জানান, ‘আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য দীর্ঘদিন নির্যাতন করেছে। শেষ পর্যন্ত পরকীয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফেলেছে। এখন আত্মহত্যার গল্প সাজাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জামাতা মুজিবুর রহমান, শ্বশুর রজব আলী ও শাশুড়িকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় মামলা করা হয়েছে।
মমতাময়ী মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রিমার দুই বছরের যমজ শিশু। তাদের কান্না থামানো যাচ্ছে না। এখনো তারা জানে না, পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন তাদের মা।
রিমার মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বিয়ে দিয়ে ভেবেছিলাম সংসারে সুখে থাকবে আমার মেয়ে। কিন্তু সেই সংসারই হলো তার কবর। অন্য নারীর কারণে আমার মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল।’
অপরাধীদের বিচার দাবি করে রিমার বোন সীমা বলেন, ‘আমার বোনকে বারবার মারধর করেছে তার স্বামী। আমরা সমাধান করতে চেয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাণটাই গেল। এখন অবুঝ দুই শিশুর দিকে তাকালে বুক ফেটে যায়।’